অনলাইন ডেস্ক : নদীমাতৃক বাংলাদেশের অন্যতম নদীর নাম ধলেশ্বরী। ধলেশ্বরী মূলত যমুনার শাখা নদী। যা যমুনা নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে নারায়নগঞ্জের শীতলক্ষ্যার নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। আরও দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে ষাটনলের কাছে মেঘনা নদীতে পতিত হয়ে হারিয়েছে তার নিজস্ব পরিচয়। একসময় যে নদীর বুক চিড়ে চলত পালতোলা নৌকা আজ সে নদী শুকিয়ে মরা খালে পরিনত হয়েছে। শুস্ক মৌসুমে নদীতে চর পড়ে তৈরি হয়েছে নতুন রাস্তার যার উপর দিয়ে চলছে মোটরসাইকেল, ট্রাক্টর, মাল বোঝাই ঘোড়ার গাড়ি।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার নলসন্ধ্যা, নন্দপাড়া, কেদারপুর, আগদিঘুলিয়ার বিভিন্ন অংশ জুড়ে পড়েছে বালুর বিশাল চর। ২৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীর সর্বোচ্চ গভীরতা ছিল ২৬৫ ফুট বা ৮১ মিটার এবং গড় গভীরতা ছিল ১২২ ফুট বা ৩৭ মিটার। কিন্তু গত কয়েক বছর যাবত কোন প্রকার ড্রেজিং এবং নদী শাসন না করার ফলে নদীর গভীরতা নেই বললেই চলে। ভরা মৌসুমেও কোথাও কোথাও এর গভীরতা দাড়ায় ১০ ফুট। বর্ষা মৌসুমে নদীর গভীরতা না থাকায় এর দুই তীরে তীব্র ভাঙ্গন দেখা দেয়। এর ফলে নদীর দুই পাড় ভেঙ্গে আরও বেশি পলি জমে চরের সৃষ্টি হয়। অথচ এক সময় এই নদীর বুকেই ভেসে বেড়াতো বড় বড় বানিজ্যিক জাহাজ, পাট বোঝাই ছোট-বড় পাল তোলা নৌকা। এখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা সব কিছুতেই রয়েছে নদীর প্রভাব। ধলেশ্বরীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বদলে যায় অনেক মানুষের জীবন-জীবিকার ধরন। এক সময় নদীর পাড়ে গড়ে উঠেছিল জেলেপল্লী। সে সময় নদীতে রুই, কাতলা, চিতল, আইড়সহ বিভিন্ন মাছ পাওয়া যেত। নদীর আশেপাশের কৃষি জমি এখন পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। ফলে বদলে গেছে কৃষিকাজের ধরনও। এখন ধরেশ্বরীর তীর ঘেষে বিষাক্ত তামাক চাষের মহোৎসব চলছে। অন্য ফসলের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় প্রতিবছরই তামাক চাষের জমির পরিমান বেড়ে চলছে। তামাক চাষে মাত্রারিক্ত রাসায়নিক ও বিষ ব্যবহারের কারনে জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।
ধলেশ্বরী নদীর অকাল মৃত্যুর জন্য দায়ী যমুনা সেতুও। ’৯০ এর দশকে যমুনা নদীর উপর সেতু তৈরীর সময় ধলেশ্বরীর গতিপথ পরিবর্তন করার প্রবনতাকে ঝুঁকি হিসেবে উল্লেখ করে পাথর ফেলে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয় ধলেশ্বরীর চ্যানেলটি। আর তাতেই ধলেশ্বরীর মেরুদন্ড ভেঙ্গে পরে। ধলেশ্বরী হারিয়ে ফেলে তার ঐতিহ্য। নদী তীরবর্তী কেদারপুরের লোকজন জানান, নদীর দুই পাড় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এমন পর্যায়ে এসেছে যে সময় মতো নদী ড্রেজিং করে নদী শাসন না করা হলে মোকনা ইউনিয়নের কাজীবাড়ি অংশ দিয়ে ভেঙ্গে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যাবে। ফলে অকার্যকর হয়ে পড়বে সদ্য নির্মিত শেখ হাসিনা সেতু। নদীর ড্রেজিং এবং এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, আমার নির্বাচনী অঙ্গীকারই ছিল এই ধলেশ্বরী নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনা। সেই লক্ষ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে নদী খননের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নদী ড্রেজিং করে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে জনগণকে দেয়া আমার কথা রাখতে চাই।
তালাশনিউজ২৪.কম/এম.এইচ.এফ/০৩-ফেব্রুয়ারি-২০১৯/১২৩০