
সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের ফর্দ সাজিয়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে জোর দেওয়া হবে এবারের বাজেটে। আয় বৈষম্য কমাতে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নতুন উদ্যোগ থাকবে।
দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের জন্য একাধিক স্তর সৃষ্টির নির্দেশনা থাকতে পারে এবার। প্রবাসী আয় ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য বাজেটে থাকতে পারে প্রণোদনার সুখবর।
অর্থমন্ত্রী আগেই জানিয়েছেন, নতুন বাজেটে তিনি কর হার বাড়াতে চান না। বরং করের আওতা বাড়িয়ে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে চান।
তার বাজেট বক্তৃতার যে খসড়া এবার তৈরি করা হয়েছে, সেখানে আসন্ন নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
সেক্ষেত্রে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হবে আগের অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেশি।
খরচের যে হিসাব অর্থমন্ত্রী করেছেন তা হবে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৮.১ শতাংশের সমান।
অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটাই হবে আ হ ম মুস্তফা কামালের প্রথম বাজেট
মুস্তফা কামালের পূর্বসূরি আবুল মাল আবদুল মুহিত আওয়ামী লীগের ভোট সামনে রেখে বিদায়ী অর্থবছরে যে বাজেট দিয়েছিলেন, তার আকার ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।
ওই অংক ছিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ২৫ শতাংশ বেশি এবং জিডিপির ১৮.৩ শতাংশের সমান।
তবে অর্থবছর শেষে গত অর্থবছরের যে সংশোধিত বাজেট সংসদে তোলা হচ্ছে, তাতে মুহিতের দেওয়া ওই বাজেটের আকার নেমে আসছে চার লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকায়।
সেই হিসাবে বলা যায়, বর্তমান অর্থমন্ত্রী কামাল বাজেটের আকার বাড়ালেও উচ্চাকাঙ্ক্ষী কোনো বড় পদক্ষেপ নিতে চাইছেন না। বরং আগের বাজেটের ধারাবাহিতা বজায় রেখে বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা সাজানোর দিকেই তার মনোযোগ। তার রাজস্ব আহরণের পরিকল্পনাতেও একই ইংগিত মেলে।
কামাল আশা করছেন, নতুন অর্থবছরের সম্ভাব্য ব্যয়ের ৭২ শতাংশ তিনি রাজস্ব খাত থেকে পাবেন। তার প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব খাতে আয় ধরা হচ্ছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।
সেক্ষেত্রে এই অংক হবে বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৯ শতাংশের বেশি।
মুহিত তার শেষ বাজেটে তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন। ওই অংক ছিল তার আগের বছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের ২৫ শতাংশ বেশি।
তবে সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ কমে তিন লাখ ১৬ হাজার ৬১২ কোটি টাকা হচ্ছে।
মুস্তফা কামালের পরিকল্পনায় আয় ও ব্যয়ের ঘাটতি থাকবে প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশের সমান। অর্থনীতিবিদরা বাজেট ঘাটতির এই পরিমাণকে গ্রহণযোগ্য সীমার মধ্যেই ধরেন।
বিদেশ থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ করে এই ঘাটতি মেটানোর পরিকল্পনা সাজিয়েছেন কামাল।
তিনি আশা করছেন, এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারলে মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখেই ৮.২০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাওয়া সম্ভব হবে।